প্রযুক্তি ও যোগাযোগ: নতুন দিকনির্দেশ ও সম্ভাব্য পরিবর্তন

 বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) সেক্টরে দ্রুত পরিবর্তন চলছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা, মোবাইল নেটওয়ার্কের গুণগত মান এবং নতুন প্রযুক্তির নীতি (যেমন — 5G, এআই) নিয়েও আলোচনা তীব্র। 

আশা করা যায়, বিটিআরসি বা ICT বিভাগ শিগগিরই কিছু নতুন নিয়ম, নির্দেশিকা ও প্রজ্ঞাপন নিয়ে আসবে। নিচে সম্ভাব্য বিষয়গুলো এবং এগুলো আমরা কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, সেটার একটি বিশ্লেষণ দেওয়া হল:



সম্ভাব্য নতুন নীতি / প্রজ্ঞাপন — কী আসতে পারে?

নিচে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যা নতুন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:


বিষয় : সম্ভাব্য প্রজ্ঞাপন / নিয়ম প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

ইন্টারনেট সেবার গুণগত মান ও সেবাগ্যারান্টি ইন্টারনেট সেবাদাতাদের জন্য KPI (মান সূচক, পরিষেবা গ্যারান্টি) বাধ্যতামূলক করা (যেমন: লোড টাইম, আপটাইম, ডাউনটাইম সীমা) গ্রাহক নিশ্চিততা বাড়বে, কিন্তু সেবাদাতাদের প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নের বোঝা বাড়বে

মাসিক বিল ছাড় ও ক্ষতিপূরণ নীতি যদি সার্ভিস নির্দিষ্ট সময় ধরে বন্ধ থাকে, তাহলে গ্রাহককে অর্ধেকে বা বেশি ফিরিয়ে দেওয়া যাবে — যেমন ৫ দিন অব্যাহত বিঘ্ন হলে ৫০%, ১০ দিন হলে ২৫% বিল ছাড় দেওয়ার নিয়ম ইতিমধ্যে ISP ট্যারিফ চার্টেও দেখা যাচ্ছে  সেবাদাতারা গ্রাহকের প্রতি আরও দায়বদ্ধ হবে; কিন্তু সার্ভার ও নেটওয়ার্ক ব্যাকআপ খরচ বেড়ে যেতে পারে

লাইসেন্স ও গাইডলাইন সংশোধন বিটিআরসি ইতিমধ্যে International Terrestrial Cable (ITC) ও International Internet Gateway (IIG) লাইসেন্স গাইডলাইন সংশোধনের দিক নিয়েছে  আন্তর্জাতিক ডেটা বণ্টন ও রুটিং আরও স্বচ্ছ হবে, তবে সংযোগ খরচ ও রূপসা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে

মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ নীতি ঘণ্টাভিত্তিক ও ১–৩ দিনের মেয়াদি প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এবং অব্যবহৃত ডেটা পুরোটাই যুক্ত হবে, যদি একই প্যাকেজ আবার নেওয়া হয়  গ্রাহকের পছন্দের সুযোগ বাড়বে; অপারেটরদের প্যাকেজ পরিকল্পনায় নতুন উদ্ভাবন আনতে হবে

আরো পড়ুন : AI প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন 


ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারি পক্ষ কারো ও কোনো সময় ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবে না — টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের দাবি।  গণ-স্বাধিকার ও যোগাযোগ স্বাধীনতা রক্ষার্থে বড় পদক্ষেপ; তবে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে দৃষ্টিকোণ থেকে যোগান দেওয়া হবে

উপগ্রহ-ভিত্তিক ইন্টারনেট (যেমন Starlink) বিটিআরসি ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে, যাতে উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা দাতারা লাইসেন্স, গেটওয়ে স্থাপন ও গেটওয়ে-সংযোগের কাঠামো মান অনুসরণ করবে  গ্রামীণ ও দুরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট সুযোগ বাড়বে; কিন্তু গোপনীয়তা, নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের দিক থেকে উদ্বেগ থাকতে পারে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নীতি ICT বিভাগ একটি জাতীয় AI নীতিমালা ২০২৪ খসড়া প্রস্তুত করেছে, যেখানে AI ব্যবহারের নৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় আনা হয়েছে  বাংলাদেশকে স্মার্ট স্ট্যাটাসে উন্নীত করার সুযোগ; তবে ডেটা সুরক্ষা, algorithmic bias (পক্ষপাত), দায় ও নিয়ন্ত্রণের সমস্যা তৈরি হতে পারে

---

মতামত

আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তি নীতিমালা ও প্রজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ:

শুধু নীতি থাকলেই হবে না — বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে।

গ্রাহকের অধিকার ও সার্বভৌম গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে, এআই ও নজরদারি ব্যবহারে স্বচ্ছতা থাকতে হবে।

সেবাদাতা সংস্থাগুলোকে প্রণোদনা ও সহায়তা দিতে হবে যাতে তারা নতুন মান বজায় রাখতে সক্ষম হয়।

প্রযুক্তির দুনিয়ায় অন্য দেশগুলো যেমন — 5G, AI নীতি, ডিজিটাল সুরক্ষা — এগুলোতে পিছিয়ে পড়া ঠিক না।

তবে, ব্যালান্স জরুরি: নীতি কঠোর হলে উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হবে; নীতি শিথিল হলে গ্রাহক ও জনস্বার্থ বিপন্ন হবে।

সুতরাং, নতুন প্রজ্ঞাপন আসুক — তবে চমক নয়, বাস্তবযোজ্য, দায়বদ্ধ ও জনকল্যাণমুখী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রুলার বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url