মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত

সম্প্রতি সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে ভেঙে দুটি আলাদা অধিদপ্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে— 



একদিকে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ার সম্ভাবনা, অন্যদিকে বিভাজনের ফলে নতুন চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা। এই লেখায় আমি আলোচনা করেছি এই সিদ্ধান্তের পটভূমি, সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা এবং এর ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে।


.

বর্তমান কাঠামো: সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমানে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ও পরীক্ষার তদারকি এককভাবে পরিচালিত হয়। বোর্ড এককভাবে নিয়ম, সিলেবাস, পরীক্ষা ব্যবস্থা, ফল প্রকাশ এবং মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। এই কেন্দ্রীকরণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় নানান সুবিধা রয়েছে, একই সঙ্গে সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট।

সুবিধাসমূহ


1. একক নীতিগত সমন্বয়_একক অধিদপ্তর একটি প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা তৈরি করতে পারে যা দেশে সারা বোর্ডে সমন্বয় সাধন করবে। সমস্ত বোর্ড একই ধরণের নির্দেশনা, সময়সূচি ও পরীক্ষা কাঠামো অনুসরণ করলে ন্যায্যতার ও মানের অভাব কম হয়।

2. সংস্থান ও অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীকরণ_কেন্দ্রীয় স্তরে অভিজ্ঞ জনবল, মূল্যায়ন দক্ষতা, প্রযুক্তি ও নীতি কাজগুলো কেন্দ্রীভূতভাবে ব্যবহার করা যায়। নতুন নীতি প্রণয়ন বা পরীক্ষার প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে সহজ হয়।

3. সহজ তত্ত্বাবধান ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণ_এক আধিকারিক সংস্থা থাকলে তার দায়বদ্ধতা স্পষ্ট থাকে। যদি কোনও বোর্ডে অব্যবস্থা বা অনিয়ম হয়, তখন ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা সোজাসুজি হস্তক্ষেপ করতে পারে।

4. মান বজায় রাখা সহজ_সকল বোর্ডে একটি সমন্বিত মান-মানদণ্ড প্রয়োগ করা যায়, যাতে ভালো ও খারাপ বোর্ডের পার্থক্য কম থাকে।

সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা


1. প্রশাসনিক জটিলতা ও ধীরগতি_একক স্তর বড় বিভাগ বা সংস্থা হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ধীরগতিতে হতে পারে। কেন্দ্রীয় অনুমোদন বা নীতিগত পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।

2. স্থানীয় প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপটে নমনীয়তার অভাব_দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একক কেন্দ্রীয় নীতি সব জায়গায় কাজ নাও করতে পারে। স্থানীয় বোর্ডের নিজস্ব অভিযোজন প্রয়োজন হতে পারে, যা কেন্দ্রীকরণ প্রকৃতপক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

3. অতিরিক্ত কার্যভার ও বোঝা_একক সংস্থার উপর দায়িত্ব ও কাজ অনেক বেশি থাকে — পরীক্ষা নিরীক্ষণ, ফল প্রকাশ, নীতি নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ — যা তার উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপায় এবং বিভিন্ন বিভাগে মনোনিবেশের সুযোগ সংকীর্ণ করে।

4. আঞ্চলিক অবহেলা ও বৈষম্যের সম্ভাবনা_যেসব অঞ্চলের বোর্ডে সক্ষমতা কম বা অবকাঠামো দুর্বল, তারা পিছিয়ে পড়ে যেতে পারে কারণ কেন্দ্রের নজর সেখানে কম পাওয়া যায়। যেমন, দূরবর্তী এলাকায় প্রযুক্তি বা অভিজ্ঞ মূল্যায়ক কম পাওয়া যেতে পারে।

তাই, বর্তমানে একক কাঠামোর সীমাবদ্ধতাগুলি স্পষ্ট। আমার মনে হয়, সরলীকরণ ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভাঙাটাও একটি বিকল্প হতে পারে — তবে সেটিও চ্যালেঞ্জবহুল এবং সতর্ক পরিকল্পনা চাই।

---

অধিদপ্তরকে ভেঙে দুই ভাগ করার যুক্তি ও চ্যালেঞ্জ

নিচে সেই সিদ্ধান্তের বিকল্প সুযোগ ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:

পক্ষে যুক্তি

1. ভারি কাজ বিভাজন ও দক্ষতা বৃদ্ধি_যদি একক অধিদপ্তরকে দুটি অংশে ভাগ করা হয় — একটি “মাধ্যমিক (এসএসসি)” বিষয়ক দায়িত্ব এবং অন্যটি “উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি)” দায়িত্ব — তাহলে প্রতিটি সংস্থা কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট স্তরের ওপর ফোকাস করতে পারবে। কাজ ও পরিকল্পনার ক্ষেত্র সংকীর্ণ হলে কার্যবৃদ্ধি ও গুণমান বাড়তে পারে।

2. দায়ের সীমা ও দায়বদ্ধতার স্পষ্টতা_একে “মাধ্যমিক অধিদপ্তর” ও “উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর” নাম দেওয়া যেতে পারে এবং প্রতিটির জন্য দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে— কোন বোর্ড কিসে কাজ করবে, মান নীতি, তালিকাভুক্তি, পরীক্ষা, ফল প্রকাশ ইত্যাদি সব স্পষ্ট। ফলে বিভ্রান্তি কম হবে।

3. নতুন উদ্ভাবন ও উন্নতি দ্রুত প্রবর্তন_দুটি সংস্থা থাকলে নতুন পরীক্ষার ধারণা, পাইলট প্রকল্প বা শিক্ষাগত উদ্ভাবন দ্রুত প্রয়োগ করা যেতে পারে। কারণ বোঝা কম থাকবে এবং প্রশাসনিক অবাধ্যতা হ্রাস পাবে।

4. প্রতিরূপ ও প্রতিযোগিতামূলক মান বজায় রাখার সুযোগ_প্রতিটি অধিদপ্তর নিজের বোর্ডগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করতে পারে — মানোন্নয়ন, পরীক্ষার সেবা, ফল প্রকাশের সময় ইত্যাদিতে দ্রুততার দিক থেকে উন্নতি হবে।

5. স্থানীয় বোর্ডগুলোর সঙ্গে সহজ সমন্বয়_যেখানে বোর্ডগুলোর কাজ মাধ্যমিক স্তরের (এসএসসি) বা উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) অংশের সঙ্গে অধিক সম্পর্কযুক্ত, নতুন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বোর্ডগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারবে। বেশি সমন্বয়, নগদ প্রতিক্রিয়া এবং দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে।


বিপক্ষে যুক্তি ও চ্যালেঞ্জ


1. সাধারণ প্রকাশ্যে বিভাজনের খরচ_নতুন দুটি সংস্থা গড়ে তোলার অর্থ, অবকাঠামো, জনবলের পুনর্বিন্যাস, প্রশাসনিক অফিস ও সরঞ্জাম — সব কিছুতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে। সঞ্চালনায় অনাবশ্যক লেয়ারের সৃষ্টি হতে পারে।

2. মান ও সমন্বয়ে বিচ্ছিন্নতা_যদি দুটো সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ না করে, তাহলে নীতি বা পরীক্ষার কাঠামোর পার্থক্য দেখা দিতে পারে। যেমন, আগে ছিল কেন্দ্রীয় নীতি; এখন যদি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সংস্থা পৃথক নীতি গ্রহণ করে, তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভোগ হতে পারে।

3. সিলেবাস ও মূল্যায়নে অসঙ্গতি_উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মধ্যবর্তী (মাধ্যমিক) স্তরের প্রস্তুতির উপর অনেক নির্ভর করা হয়। যদি দুই সংস্থা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় না রাখে, তাহলে সিলেবাস বা মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্যে গ্যাপ বা টান পড়তে পারে।

4. প্রশাসনিক দ্বৈততা ও সংযোগ জটিলতা_দুটি অধিদপ্তর হলেও বোর্ড, স্কুল ও শিক্ষা অফিসগুলোর সঙ্গে দ্বৈত যোগাযোগ থাকতে পারে, যেটি জটিলতা বাড়াবে। যেমন, একটি স্কুল যদি SSC ও HSC উভয় কাজ করে, তাহলে দুই সংস্থা সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

5. মানব সম্পদ ও দক্ষতা বিভাগীকরণে সমস্যা_অনেক ক্ষেত্রে লোকবল ও অভিজ্ঞতা ভাগ করতে হবে। যদি এক সংস্থা কোনও বিষয়ে অধিক সক্ষমতাসম্পন্ন হয়, অন্য সংস্থা সেটি বজায় রাখতে সক্ষম হতে নাও পারে। অভিজ্ঞতা, নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সমানভাবে বিতরণ করা কঠিন হবে।

6. পরিবর্তনকালীন অব্যবস্থা_বাস্তবে এ ধরনের বিভাজন পরিকল্পনায় নেওয়া হলেও পরিবর্তনের সময়ে — অনিয়ম, তথ্য হস্তান্তর সমস্যা, জনবলের মূল্যায়ন — অনেক রূপান্তর ঝামেলা দেখা দেবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের জন্য এই অঞ্চলে বিঘ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে।


সুতরাং, এই সিদ্ধান্ত একদিকে অর্থ ও দক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা তৈরি করতে পারে; অন্যদিকে, যদি ভালোভাবে পরিকল্পিত ও সমন্বিত হয়, শিক্ষাব্যবস্থা গঠন ও কার্যদক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে পারে।

---

সাফল্যের শর্ত ও কার্যকর বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা


যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সফল ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য নিচে কয়েকটি শর্ত ও পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. পরিপক্ক পরিকল্পনা ও পর্যায়ক্রমে রূপান্তর_একক দিনে দুই সংস্থায় বিভাজন আনা উচিত নয়। ধাপে ধাপে পরিকল্পিত রূপান্তর প্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে — প্রথম পর্যায়ে প্রশাসনিক ও মান-নীতি বিভাজন, তারপরে বোর্ড ও কাজ শাখা বিভাজন। রূপান্তরকালীন একটি যুগপৎ সমন্বয় দল থাকতে হবে।

২. সমন্বয়কারী কমিটি গঠন_দুটি সংস্থা ও বোর্ডগুলোর মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে একটি সর্বভারতীয় “সমন্বয় কমিটি” গঠন করা উচিত, যাতে নতুন নীতি, সিমেন্টিক সিদ্ধান্ত, সিলেবাস পারস্পরিক সমন্বয় নিশ্চিত করা যায়। এটি হয়তো একটি স্বাধীন বোর্ড হতে পারে।

৩. তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাটা একীকরণ_উভয় সংস্থা ও সমস্ত বোর্ডের মধ্যে তথ্য একীভূত (ইনটিগ্রেটেড) ডাটাবেস থাকতে হবে যাতে তথ্য বিবরণ, ফলাফল, শিক্ষার্থী রেকর্ড সবই কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্ত হয়। এটি দ্বৈততার সমস্যা কমাবে এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করবে।

৪. জনবল ও দক্ষতা বিন্যাস_প্রত্যেক সংস্থায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। যারা একটি পর্যায়ে কাজ করেছেন, তাদের পুনর্বিন্যাস ও প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকতে হবে। যাতে মানব সম্পদ অপচয় না হয়। নতুন নিয়োগ ও প্রশিক্ষণসহ একটি সুদক্ষ আকাঙ্ক্ষার তালিকা থাকতে হবে।

৫. বাজেট ও অর্থায়ন পরিকল্পনা_বিভাজনের খরচ ও পরিচালনা অর্থ কোথা থেকে আসবে — সরকার, অনুদান, উন্নয়ন প্রকল্প — তা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। উভয় সংস্থার বাজেট স্বচ্ছ ও নির্ভরশীলভাবে বরাদ্দ করা উচিত। বাজেট ব্যবস্থাপনায় লোভ-প্রবণতা কমাতে নিরীক্ষণ ও জবাবদিহি থাকতেই হবে।

৬. পাইলট প্রজেক্ট ও মূল্যায়ন_সারা দেশে প্রচলিত হওয়ার আগে কিছু বোর্ড বা জেলা পর্যায়ে পাইলট প্রজেক্ট চালিয়ে দেখা যেতে পারে। তার ফলাফল, সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করা হবে এবং সেই অনুযায়ী পরিবর্তন সাধন করা হবে।

৭. স্থানীয় বোর্ড ও স্কুল পর্যায়ের অংশগ্রহণ_ভিত্তি থেকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে স্থানীয় বোর্ড, স্কুল ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। তাদের পরামর্শ, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া আবশ্যক। স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধান কেন্দ্রে বোঝা উচিত।

৮. মান ও নীতিগত সমন্বয় বজায় রাখা_সংবিধান, শিক্ষানীতি ও পরীক্ষার নীতি উভয় সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। সিলেবাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা বাধাহীনভাবে মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে যেতে পারে।

৯. মনিটরিং ও মূল্যায়ন_নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, মুক্ত পর্যালোচনা ও স্বতন্ত্র মূল্যায়ন জরুরি। উভয় সংস্থা ও বোর্ডের সক্ষমতা, ফলাফল, শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা নিরীক্ষণ করতে হবে এবং ফলাফল অনুযায়ী সংস্কার করতে হবে।

১০. আইনগত ও নীতি সহায়ক কাঠামো_বিভাজন প্রক্রিয়াটি আইনগতভাবে সুরক্ষিত হওয়া উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংসদ ও সংশ্লিষ্ট আইন পাস করে, সংস্থা, বোর্ড ও স্কুলগুলোর দায়িত্ব ও ক্ষমতা স্পষ্ট করতে হবে।

---

সম্ভাব্য সামাজিক ও শিক্ষাব্যবস্থাগত প্রভাব


ইতিবাচক সম্ভাবনা

  • শিক্ষার গুণমান বৃদ্ধির আশা

দুটো বিশেষায়িত সংস্থা থাকলে তারা তাদের দৃষ্টিকোণ ও কর্মধারায় আরও গভীরে যেতে পারবে। বিশেষভাবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যবস্তু, প্রবণতা, নতুন বিষয়াবলী দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।


  • উচিত প্রতিপালন ও প্রস্তুতির সুযোগ

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় বোর্ডে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তুতির সুযোগ পাবে — মাধ্যমিক পর্যায়ে যে প্রস্তুতি দেওয়া হবে, তা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সহায়ক হবে।


  • নতুন প্রশাসনিক সংস্কার ও উদ্ভাবন

দুই সংস্থা থাকলে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হতে পারে— কোন সংস্থা ভালো ফল দেবে, পরীক্ষার সেবা ও ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করবে, শিক্ষার্থীদের সুবিধা বাড়াবে ইত্যাদি।


নেতিবাচক ঝুঁকি


  • সামাজিক বিভাজন ও অসমতা বৃদ্ধি

ধনী ও উন্নত অঞ্চল গুলোতে নতুন অধিদপ্তরগুলোর সুবিধা দ্রুত পৌঁছবে, অভূগোাঞ্চল কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। নতুন ভবন, তথ্যপ্রযুক্তি, সক্ষম শিক্ষক — এসব বৈষম্যের কারণে বিদ্যমান গ্যাপ বাড়তে পারে।

  • শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি ও মানসিক চাপ

পরিবর্তনের সময়ে পরীক্ষার ধরণ, ফল প্রকাশের সময়, বোর্ড পরিবর্তনের নিয়ম – এসব যদি একসময়ে পরিবর্তিত হয়, শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হতে পারে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ঝামেলা হতে পারে।

  • অত্যধিক প্রশাসনিক জট

একক সংস্থা থেকে দ্বৈত সংস্থায় রূপান্তর ঘটলে শিক্ষার্থীর, স্কুলের ও জেলা অফিসের সঙ্গে দ্বৈত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে। যে কাজ আগে একটি ফরম দিয়ে বা একটি সংস্থার মাধ্যমে হয়, সেই কাজ এখন দুই সংস্থাকে জানাতে হতে পারে।

  • মান নিয়ন্ত্রণে কঠিনতা

ওডিনারি বোর্ডগুলোর মধ্যে মানের পার্থক্য যদি নতুন সংস্থাগুলোর মধ্যে গড়ে উঠে, তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-অসুবিধা বৃদ্ধি পেতে পারে।

---

প্রস্তাবিত “মডেল কাঠামো” — একটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়

নিচে এমন একটি মডেল কাঠামো প্রস্তাব করা হলো, যা দুই ভাগ করার সুবিধা নিতে পারবে কিন্তু ঝুঁকিগুলো কমিয়ে আনবে:


1. প্রধান সংস্থা (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সমন্বয় বোর্ড/অধিদপ্তর)— একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় সংস্থা থাকবে, যার কাজ হবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটি অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা, নীতি নির্ধারণ, তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা, গুণমান নিরীক্ষণ এবং যুক্ত নীতিগত বিষয় ঠিক করা।

— এই সংস্থা কোনও পরীক্ষা নেওয়া বা সরাসরি ফল প্রকাশের কাজ করবে না, বরং গো-নির্দেশিকা ও তত্ত্বাবধান দেবে।

2. দুটি স্বনিয়ন্ত্রিত অধিদপ্তর_মাধ্যমিক অধিদপ্তর (SSC ও সমমান কার্যক্রম): এটি মাধ্যমিক পর্যায়ের সিলেবাস, পরীক্ষা ব্যবস্থা, ফল প্রকাশ, বোর্ডগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করবে।


উচ্চমাধ্যমিক অধিদপ্তর (HSC ও সমমান কার্যক্রম): উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কার্যক্রম (বিষয় নির্বাচন, পরীক্ষা, মূল্যায়ন, বোর্ড সমন্বয়) পরিচালনা করবে।


3. স্থানীয় বোর্ডগুলোর স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা_বোর্ডগুলোর নিয়ামক ও তদারকি কর্তৃত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট স্তরে (মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক). বোর্ডগুলোর কাজ নিজ নিজ স্তরে নিয়ন্ত্রিত হবে, কেন্দ্রীয় সংস্থা ও সংশ্লিষ্ঠ অধিদপ্তর দ্বারা নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন হবে।

4. আন্তঃসংযোগ তথ্যব্যবস্থা_এক সমন্বিত তথ্যব্যবস্থা থাকতে হবে, যা দুই অধিদপ্তর ও সমস্ত বোর্ড সরাসরি ব্যবহার করবে। ফলে শিক্ষা তথ্য, ফলাফল, পরীক্ষার ইতিহাস, শিক্ষার্থীর রেকর্ড — সব এক জায়গায় থাকবে।

5. ধাপে ধাপে রূপান্তর ও পাইলট প্রয়োগ_প্রথমে কয়েকটি বোর্ডে নতুন মডেল চালিয়ে দেখুন; সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তী ধাপে ব্যাপক রূপান্তর করবেন। ঝামেলাপূর্ণ অঞ্চলে সমর্থন বাড়াতে হবে।

6. মান-নিরীক্ষা ও জবাবদিহি_দুটি অধিদপ্তর এবং বোর্ডগুলোর জন্য স্বতন্ত্র মূল্যায়ন কমিটি থাকতে হবে, যারা সেবার মান, ফলাফল, সময়সাপেক্ষতা নিরীক্ষণ করবে। ফলাফল অনুযায়ী সংশোধন ও সংস্কার হবে।

7. নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ নীতি_নতুন অধিদপ্তরগুলোর জন্য যোগ্য জনবল নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। যারা বর্তমান অধিদপ্তরে কাজ করছেন, তাঁদের রূপান্তর ও পুনর্বিন্যাস করতে হবে। অভিজ্ঞদের নতুন সংস্থায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

8. আইনি ও নীতিগত কাঠামো_এই মডেল আইনগতভাবে সুরক্ষিত হবে — সংবিধান, শিক্ষা আইন, শাসন কাঠামো দ্বারা। নীতিগত পরিমার্জন ও সংশোধন সময়নিসিক্তভাবে করা হবে।

---

মন্তব্য

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত সহজ নয় — এটি একটি চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিবর্তন। তবে, যদি এটি ভালোভাবে পরিকল্পিত, ধাপে ধাপে এবং সমন্বয়মূলকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে: শিক্ষাব্যবস্থায় দ্রুততা, মান উন্নয়ন, স্থানীয় অভিযোজন ও সম্প্রসারণের সুযোগ।

এই সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে অবশ্যই নিম্নরূপ বিষয় নিশ্চিত হওয়া উচিত — সংশ্লিষ্ট জনসাধারণ, শিক্ষক, ছাত্র, প্রশাসনিক কর্মী ও বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে আলোচনা, পাইলট প্রকল্প, পর্যবেক্ষণ সুবিধা, বাজেট পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাধনশীলতা। শিক্ষা একটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র; এখানে বিতর্ক নয়, সমন্বয় ও দূরদৃষ্টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রুলার বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url